১১ ঘন্টার আর্তনাদেও গলেনি মানবতা, অতঃপর…
- আপডেট সময় : ০৫:১৩:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুন ২০২০ ৩১ বার পড়া হয়েছে
মারা যাওয়ার ১১ ঘন্টায়ও মা ছাড়া ভাই-বোন, স্বজন ও গ্রামবাসীর কেউ দেখতে আসেনি সুশান্ত কর্মকারকে।এগিয়ে আসেনি সৎকারে অংশ নিতেও।লাশের পাশে মা গঙ্গা রানি কর্মকার আহাজারি আর আর্তনাদ করে যাচ্ছিলেন। ফোনে অন্য সন্তান,স্বজন আর গ্রামবাসীকে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করছিলেন।কিন্তু এতটুকু গলেনি মানবতা।কেউই এমনকি সুশান্তর বড় ভাই, চার বোন ও বোনের পরিবারের সদস্যরাও ফিরে তাকাননি।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন সুশান্ত কর্মকার বুধবার বিকেলে মারা যায় পা ফোলা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে।তিনি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কলারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা।কেউ এগিয়ে না আসায় হাসপাতাল থেকে লাশ নেয়া ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিয়ে বিপাকে পড়েন গঙ্গা রানি কর্মকার ও স্থানীয় প্রশাসন। শরীয়তপুর জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজন পাল উদ্যোগ নিলেও প্রথমে দাহ করার কাজে যুক্ত হতে রাজি হয়নি স্থানীয় কেউ।পরে পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতাদের অনুরোধে ভেদরগঞ্জ উপজেলার দুই যুবক ও নড়িয়া উপজেলার অন্য ইউনিয়নের তিন যুবক দাহ কাজ করতে রাজি হন। অবশেষে মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সত্য নারায়ণের সেবা মন্দিরে তার সৎকার সম্পন্ন হয়।
গঙ্গা রানি কর্মকার স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, জীবনের শেষ বয়সে ছেলের লাশের ভার আমাকে এভাবে বইতে হবে, ভাবতে পারিনি। এভাবে মানুষের মানবতা হারিয়ে গেল? কী হবে এ পৃথিবীতে বেঁচে থেকে? কিসের জন্য বেঁচে থাকা? মানুষের কল্যাণের জন্যই যদি কাজ না করতে পারি। কেউ আমার আর্তনাদ শুনল না। সন্তান, স্বজন, গ্রামবাসী কেউ না। আমার মতো এমন পরিণতি কাউকে যেন দেখতে না হয়।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়ন্তী রুপা রায় বলেন, করোনায় মৃত অথবা করোনা সন্দেহ আছে এমন মৃতদেহ বিশেষ সুরক্ষা মেনে সৎকার করতে হবে। সে অনুযায়ী পিপিই সরবরাহ করেছি। কিন্তু কাউকেই রাজি করাতে পারছিলাম না। যাকেই রাজি করাই, তিনিই পালিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে অন্য উপজেলার ও নড়িয়ার অন্য ইউনিয়নের যুবকেরা এগিয়ে আসেন।
এদিকে, হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করার পর করোনা পরীক্ষার জন্য সুশান্তর নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়। তিনি করোনায় সংক্রমমিত হয়নি বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের চিকিৎসক আব্দুর রশিদ।
সুশান্ত কর্মকার স্থানীয় ঘড়িসার বাজারের একটি স্বর্ণের গয়না প্রস্তুত কারখানায় কাজ করতেন। বেশ কয়েক বছর আগে বাবা মারা গেছেন। বড় ভাই তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে আলাদা থাকেন। চার বোনই বিয়ের পর তাদের স্বামীদের সঙ্গে থাকেন। মা গঙ্গা রানিকে নিয়ে সুশান্ত কলারগাঁও গ্রামে পৈতৃক ভিটায় থাকতেন। বেশ কিছু দিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিল পা ফুলে যাওয়ার সমস্যা। এমন পরিস্থিতির মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরে তার মা নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে। শ্বাসকষ্ট থাকায় করোনা সন্দেহে সুশান্তকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল।